বাঙালি জাতি বা বাঙালী জাতি দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ একটি ইন্দো-আর্য জাতিগোষ্ঠীর নাম। স্থানীয় জনসংখ্যা স্বাধীন বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, বরাক উপত্যকা এবং নিম্ন আসাম ও মণিপুরের কিছু অংশের মধ্যে বিভক্ত। তাদের অধিকাংশই বাংলায় কথা বলে, যা ইন্দো-ইরানি ভাষাসমূহের বিশেষ একটি ভাষা।
বাঙালি জাতির উদ্ভব ঘটেছে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার বছর পূর্বে। এ অঞ্চলে প্রথম আসে মানুষ, যাদেরকে নেগ্রিটো বলা হয়। তারপর বিভিন্ন জাতি বর্ণের মিশ্রণে সৃষ্টি হয় বাঙালি জাতি। সমগ্র বাঙালি জাতিকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা : প্রাক আর্য বা অনার্য জনগোষ্ঠী এবং আর্য জনগোষ্ঠী ৷ প্রাক আর্য জনগোষ্ঠকে মূলত নেগ্রিটো, অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, মঙ্গোলীয় বা ভোটচীনীয় এই চারটি শাখায় বিভক্ত ছিল।
১. অনার্য জনগোষ্ঠী
নেগ্রিটো
অস্ট্রিক
দ্রাবিড়
মঙ্গোলীয়
২. আর্য জনগোষ্ঠী
বাঙ্গালীদের সবচেয়ে প্রাচীন পূর্বপুরুষ হলো নেগ্রিটোরা। বর্তমানে সাঁওতাল, ভীল, মুণ্ডা, হাড়ি, চণ্ডাল ও ডোম উপজাতিকে নেগ্রিটোদের উত্তরসূরী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। বিশেষ করে সুন্দরবন, ময়মনসিংহ ও যশোর অঞ্চলে এদের প্রভাব লক্ষ্যণীয়।
অস্ট্রিক জাতি হলো অনার্য জনগোষ্ঠী । বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে অস্ট্রিক জাতি থেকে। অস্ট্রিক জাতির আরেক নাম 'নিষাদ জাতি’। প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বে এরা ইন্দোচীন থেকে আসাম হয়ে বাংলায় প্রবেশ করে। নেগ্রিটোদের উৎখাত করে সিন্ধু-বিধৌত অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে।
দক্ষিণ ভারতের বৃহত্তর তামিল জনগোষ্ঠী দ্রাবিড়দের উত্তরসূরী। সিন্ধুর হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতার স্রষ্টা দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী। দ্রাবিড়রা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে বর্তমান দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবেশ করে। দ্রাবিড়রা অস্ট্রিকদের উপর প্রভাব বিস্তারের ফলে উত্তরের সংমিশ্রনে গড়ে উঠে বাঙ্গালী জাতির সিংহভাগ।
মঙ্গোলীয়রা (Sino- Tibetan) ইন্দোচীন হতে আগমন করে। কালের বিবর্তনে অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও মঙ্গোলীয় জাতির ত্রি-সংমিশ্রণ ঘটে। ত্রিপুরা, চাকমা, গারো, কোচ, ইত্যাদি এই গোষ্ঠীভুক্ত।
আর্য হচ্ছে একটি প্রাচীন জাতিবিশেষ, যার অর্থ সর্বংশজাত ব্যক্তি। আর্যদের আদিনিবাস ছিল ইউরাল পর্বতের দক্ষিণে বর্তমান মধ্য এশিয়া- ইরানে। প্রায় ২০০০ বছর পূর্বে খাইবার গিরিপথ (আফগানিস্থান-পাকিস্তান) ব্যবহার করে আগমন করে এদেশে। আর্যরা সনাতন ধর্মালম্বী, তাদের ধর্মগ্রন্থের নাম বেদ। বেদ থেকে ঋগ্বেদের সৃষ্টি হয়েছে। আর্য হওয়ার ধারণাটি জাতিগত নয়, বরং ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ।
Read more